ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা কখন করা উচিত?

চিকন বা মোটা হওয়া নিয়ে একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে আজকাল মানুষের জীবনে। আর এই ওজন কমাতে আমরা কী না করি! কেউ না খেয়ে থাকা, কেউ ব্যায়ামাগারে যাওয়া, আবার কেউ মেপে মেপে খাওয়া, সকাল থেকে বিকেল হাঁটা, বাসা বাড়িতে ট্রেডমিল ব্যবহার করা, ইত্যাদি কতশত চেষ্টা করে এবং এই চেষ্টা করার পরও ওজনের রাশ যেন টেনে ধরাই যাচ্ছে না। আজকে আলোচনা করবো ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা কখন করা উচিত ? আর কেনো সকালের নাস্তা দেরি করে করা উচিত ? চলুন শুরু করা যাক।

ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা কখন করা উচিত?

বন্ধুরা বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, মানুষের শরীরের ওজন কমাতে হলে, সব চেয়ে বেশি নজর দিতে হবে প্রতিদিন সকালের নাস্তার দিকে। বলা হয়, প্রতিদিনের সকালের নাস্তা সারা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। আর প্রতিদিন সকালের নাস্তায় কী কী খাচ্ছেন, আর কখন খাচ্ছেন, এগুলোর উপর নির্ভর করছে আপনার শরীরের ওজন বাড়বে নাকি কমবে। এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হলো, ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা কখন করা উচিত ? সকালের নাস্তা কখন খেলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাওয়া যাবে ?

বন্ধুরা পুষ্টিবিশেষজ্ঞ একজন, যিনি কিংস কলেজ লন্ডনের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর। তিনি বলেন যে, প্রতিদিন সকালে বেলা ১১টার পর সকালের নাস্তা খেতে হবে। কিন্তু তিনি এ কথা কেনো বলেন ? ভাবার বিষয় বেশ, বেলা ১১তার পর কি কেউ নাস্তা করে ? এর কারণ হচ্ছে, গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক টানা ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে উজন কমানোর জন্য সাহায্য করে। আর সে ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন রাতের খাওয়া দাওয়া করতে হবে অন্তত প্রতিদিন রাত ৯টার মধ্যে। আর রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করলে, তখন সকাল ১০টায় আয়েশ করে বসতে পারেন আপনার নাস্তা নিয়ে।

তবে অধ্যাপক স্পেক্টরের মতে, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ফেলা সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ, সূর্য ডুবে যাওয়ার পর পর শর্করাজাতীয় খাবার গুলো পরিপাকের যে হরমোন আছে, তার নিঃসরণের হার গুলো কমতে থাকে। আর প্রতিদিন সূর্য ডোবার আগে প্রতিদিন রাতের খাবার শেষ করতে পারলে, আপনি প্রতিদিন সকাল ৮টায় নাস্তা শেষ করতে পারেন। আর অধ্যাপক স্পেক্টর আরও বলেন যে, আপনার সুস্থ থাকতে এবং অতিরিক্ত শরীরের ওজন কমাতে হলে প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার কিছু খাওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করলে ভালো হয়।

আরও পড়ুন:-

মুখে কোনও দাগছোপ থাকবে না, প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সময় দিয়ে এই কাজ গুলো করুন

বর্তমান জীবনযাত্রার ধরন বদলে যাওয়ার ফলে শহরের মানুষ এখন রাতের খাবার দেরিতে খায়। তবে আগের প্রজন্ম রাতের খাবার একটু তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল।

সকালের নাস্তা কেন ১৪ ঘণ্টা পর করতে হবে ?

এই ১৪ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সবার শরীরের স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়ার জন্য। কারণ, একটি সার্কাডিয়ান ছন্দ রয়েছে, আমাদের পেটের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া গুলোর। আর এই ব্যাকটেরিয়া গুলোরও কিন্তু বিশ্রাম অনেক প্রয়োজন। সার্কাডিয়ান ছন্দ হচ্ছে একটা চক্র। আমাদের ঘুম, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া, শরীরের তাপমাত্রা, মনের অবস্থা এবং ক্ষুধার নিয়মাবলীসহ প্রায় সবকিছুই ঘড়ির কাঁটার মতো এক নির্দিষ্ট চক্রের মধ্যে পরিচালিত হয়। যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের দেহের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পায়, আর জেগে থাকার সময় তা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এই স্বাভাবিক নিয়মের ছন্দকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় সার্কাডিয়ান রিদম। আর এতে ব্যাকটেরিয়া গুলো আমাদের পেটের খাবার burn করতে আরও দক্ষ হয়ে উঠে।

আর ফলে কতটুক শরীরের ওজন কমতে পারে ?

বন্ধুরা গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, প্রতি মাসে ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত শরীরের ওজন কমতে পারে, ১৪ ঘণ্টা উপোস থেকে সকালের নাস্তা করলে আর অন্যান্য নিয়ম মানলে। আর এই পদ্ধতিতে প্রতিদিন নাস্তা যদি করেন, শুধু আপনার শরীরের ওজনই কমবে না, বরং আপনি সুস্বাস্থ্যের একজন অধিকারী হয়ে উঠবেন।

5:2 ডায়েটের চেয়েও অনেক ভালো

বন্ধুরা আপনি ১৪ ঘণ্টা উপোস থেকে প্রতিদিন সকালের নাস্তা করাটা হচ্ছে প্রচলিত আজকাল ফ্যাশনেবল এবং ‘5:2 ডায়েট’ এর থেকেও অনেক ভালো। 5:2 ডায়েট এর মূলকথা হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে ৫ দিন স্বাভাবিক খবর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। আর বাকি ২ দিন উপোস থাকতে হবে। আর এই 5:2 ডায়েটের মূল সমস্যা হচ্ছে যে, উপোস থাকার পর আপনি যখনই খাবার খাবেন, তখন আপনার প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। আর এতে আপনার ওজন তো কমবেই না, বরং উল্টো বেড়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন:

লেবু পানি পান করার উপযুক্ত সময়: কীভাবে এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

তো বন্ধুরা আপনি প্রতিদিন রাতের খাবার যখনই খাবেন, ঠিক তার ১৪ ঘণ্টা পর সকালের নাস্তাটা সেরে ফেলুন। তাহলেই আপনি সুস্থ থাকবেন এবং আপনার শরীরের ওজনও কমে যাবে দ্রুত। কিন্তু যাদের শরীরে ডায়াবেটিস অথবা অন্যান্য কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁরা কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন, আর চিকিৎসকের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী সকালের নাস্তা খাবেন।

উপসংহার

বন্ধুরা শরীরের ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জানতে পারলাম যে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর অধ্যাপক টিম স্পেক্টরের মতে, প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা উপোস থাকার পর সকালের নাস্তা করা শরীরের বিপাকক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তো প্রতিদিন রাতের খাবার দ্রুত শেষ করে, পরের দিন বেলা ১১টার দিকে নাস্তা করলে শরীরের ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হয়। তবে, যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তাই ওজন কমাতে সকালের নাস্তা সময় মতো এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাওয়া উচিত।

বন্ধুরা আর কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন।

FAQ

১. প্রশ্ন: ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা কখন করা উচিত ?

উত্তর: ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা সাধারণত সকালে ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে করা উচিত। এটি আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয় এবং সারাদিনের জন্য এনার্জি প্রদান করে।

২. প্রশ্ন: সকালের নাস্তা যদি দেরিতে করি, তাহলে কি ওজন কমাতে সমস্যা হবে ?

 উত্তর: হ্যাঁ, যদি আপনি সকালের নাস্তা দেরিতে করেন, তাহলে আপনার মেটাবলিজম ধীর হতে পারে এবং ওজন কমাতে সমস্যা হতে পারে। সকালে নাস্তা করার সঠিক সময় মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

৩. প্রশ্ন: ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তার সময় কি কোনো নির্দিষ্ট সময়ে থাকা উচিত?

 উত্তর: হ্যাঁ, সকালের নাস্তা ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে করা উচিত। এটি আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে এবং দিনের বেলা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করে।

৪. প্রশ্ন: কি ধরনের নাস্তা করলে ওজন কমাতে সহায়ক হবে?

উত্তর: ওজন কমাতে সাহায্যকারী নাস্তার মধ্যে কম ক্যালোরির প্রোটিন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ওটমিল, ডিম, বা গ্রিন স্মুদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এটি আপনাকে দীর্ঘ সময় তৃপ্ত রাখবে।

৫. প্রশ্ন: সকালের নাস্তা না করলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত হবে?

উত্তর: সকালের নাস্তা না করলে আপনার মেটাবলিজম ধীর হতে পারে এবং আপনার শরীর মিষ্টি বা ভাজা খাবার খেতে বেশি আগ্রহী হতে পারে। তাই নিয়মিত এবং স্বাস্থ্যকর নাস্তা ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url