আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ১০ লক্ষণ

বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই ❓ আশা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা অনেক দিন পর চলে এলাম নতুন আরেকটি আর্টিকেল নিয়ে। আর সেটি হচ্ছে আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ১০ লক্ষণ বিষয়ে। তো বন্ধুরা আপনি গুগল সার্চ করে যদি এই আর্টিকেল পেয়ে যান, তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন

আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ১০ লক্ষণ

বন্ধুরা আগে একসময় আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারে সময় বিভিন্ন ভাইরাস অ্যাটাক, স্পাইওয়্যার বা অন্যান্য ম্যালওয়্যার ইত্যাদি সংক্রমণ হওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করার প্রয়োজনই ছিল না। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের নানা পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু সাইবার অপরাধীদের তৎপরতা অনেক বেড়েছে। আর যে কারণে বর্তমানে স্মার্টফোনে ম্যালওয়ার এর সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করে স্মার্টফোন নিরাপদ রাখা যায়। তবে যে কোনো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারই কিন্তু ম্যালওয়ারমুক্ত ডিভাইসের জন্য ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতেও পারে না। আর তাই আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হয়েছে কি না, তার ১০ লক্ষণ জেনে রাখা ভালো।

ম্যালওয়্যার কেমন করে কাজ করে ?

. স্মার্টফোন ঠিকঠাক মত কাজ না করলে তখন ম্যালওয়ার সংক্রমণ হতে পারে। আর মোবাইলের ফোন স্টোরেজ ঠিক করার পর অথবা স্মার্টফোনের সফটওয়্যার ঠিকঠাক করে রাখার পরও যদি স্মার্টফোন ধীরগতিতে কাজ করে, হ্যাং হয়ে যায় অথবা ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তখন বুঝে নিতে হবে যে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হতে পারে। আর এ ছাড়া স্মার্টফোনের শক্তিশালী সেলুলার নেটওয়ার্ক থাকার পরও কোনো কলড্রপ হলে সেটাও ম্যালওয়ার এর সংক্রমণের লক্ষণ।

. আবার কিছু কিছু ম্যালওয়্যার আছে যা, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর অজান্তেই অ্যাপ আনইনষ্টল করে দেয়, তখন সে বুঝতেও পারে না। আর এগুলো যেমন স্মার্টফোনের অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে, ঠিক তেমনি স্মার্টফোনে আড়িপাতার মাধ্যমে নানা তথ্য পাচার হতে পারে। আর বাড়তি অ্যাপ ইন্সটল থাকায় স্মার্টফোনের ফোন মেমোরি কমে যায় এবং ধীরগতিতে/হ্যাং হয়ে কাজ করে। আর এর ফলে স্মার্টফোনে কোন কোন অ্যাপ ইনস্টল রয়েছে, তা নিয়মিত যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে। এমন কি ইন্সটল করা অ্যাপের সক্রিয়তার তথ্য গুলো সেটিংস অপশন থেকে দেখা যেতে পারে সহজেই।  

. এই ম্যালওয়্যার গুলো যেহেতু গোপনে সংক্রমণ করে তাই স্মার্টফোনের বিল যাচাই করেও লক্ষণ বোঝা যায় সহজেই। আর ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ফলে অনেক সময় আপনার অজান্তে স্মার্টফোন অ্যাপ কেনা অথবা কোনো পেইড সফটওয়ার ডাউনলোড হতে পারে। এ ছাড়াও স্মার্টফোনে প্রিমিয়াম, রোমিং অথবা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সট চার্জ আসলে, তা ম্যালওয়্যার এর সংক্রমণের লক্ষণ। আর সাধারণত সাইবার অপরাধীরা এসব উপায় গুলো ব্যবহার করে অন্যের স্মার্টফোন থেকে নানা তথ্য পাঠিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ী কিভাবে বিজ্ঞাপন আসে ?

. স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ কিন্তু অনেকটা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের মতোই। ম্যালওয়্যার স্মার্টফোন ছড়িয়ে পরলে হুটহাট করে প্রচুর অযাচিত pop ads দেখা যায়। আর বিনা মূল্যের অনেক এন্ড্রয়েড অ্যাপ আছে, যেগুলো নানা pop ads দেখায়। কিন্তু সাধারণত এই অ্যাপস গুলো চালানোর সময় pop ads দেখায় না। আর এ ধরনের বিজ্ঞাপন স্মার্টফোনে দেখা গেলে তখন আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক ম্যালওয়্যার পপ আপ এড বন্ধ করা যায় না সহজেই। তখন ভুলেও সেই পপ আপ এড গুলোতে ক্লিক করা যাবে না। পপ আপে ক্লিক না করাই ভালো। তখন খুঁজে খুঁজে সেগুলো আনইনষ্টল করতে হবে।

. এইসব র‍্যানসমওয়্যার সাধারণত আপনার স্মার্টফোনে কম সংক্রমিত হয়। তবে এই ধরনের র‍্যানসমওয়্যার সংক্রমণে স্মার্টফোনে ফাইল কিংবা পুরো ফোন লক হয়ে যায়। তখন মেসেজ লেখা থাকে আর বলা হয় লক খোলার জন্য টাকা দেয়া লাগবে। সেগুলো সাধারণত ক্রিপ্টো কারেন্সি মাধ্যমে নেয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে টাকা পাওয়ার পরও সাইবার অপরাধীরা স্মার্টফোন কিংবা লক করা ফাইলের লক খুলে দেয় না। তো তাই স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় ফাইল অথবা তথ্যের ব্যাকআপ ক্লাউড স্টোরেজ রাখা উচিত। এর ফলে ম্যালওয়্যার অ্যাটাক হওয়ার পর আপনার স্মার্টফোন রিসেট দেওয়ার পরও প্রয়োজনীয় তথ্য, ফাইল ফিরিয়ে আনা যায়।

. স্মার্টফোন মাঝে মধ্যে নিজে থেকেই রিস্টার্ট হয়ে যাবে। আপনি ব্যবহার করছেন স্মার্টফোন কিন্তু হঠাৎ রিস্টার্ট হয়ে গেছে লক্ষ্য করলে বুঝে নিতে হবে যে, আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হয়েছে। এগুলো সব সময় হয় না খুব অল্প সময়েই হয়ে থাকে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় যদি হঠাৎ রিস্টার্ট হয়ে যায় মোবাইল তখন খুবই রাগ উঠে। কিন্তু রাগ হয়ে লাভ নেই, আপনাকে সমাধান খুজতে হবে তখন।

. অ্যাপ ক্র্যাশ হওয়া খুব স্বাভাবিক। মাঝে মধ্যে স্মার্টফোনে অ্যাপ ক্র্যাশ হয়ে যাবে, যেমন: ইউটিউব, ফেসবুক, কিংবা যেকোনো অ্যাপ ব্যাবহার করার সময় হঠাৎ লেখা উঠবে নো রেসপন্স আর তখন অফ হয়ে যাবে অ্যাপ। তখন বুঝতে হবে আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হয়েছে।

. মাঝে মধ্যে ফোন অটোমেটিক লক হয়ে যাবে। ব্যাবহার করার মধ্যেই এটা হয়ে থাকে। আর এটা খুব স্বাভাবিক লক্ষণ।

.আপনার মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আপনার মোবাইল নতুন কিংবা অত পুরানো হয় নি। কিন্তু তাও ব্যাটারি চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, অথবা ব্যাটারি নতুন লাগানোর পরও এটা হচ্ছে লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার স্মার্টফোন ম্যালওয়্যার অ্যাটাক হয়েছে। কারণ সব ফোনের ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যায় ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার কারণে না। ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হওয়ার কারণেও। আর ব্যাটারি মাঝে মধ্যে খুব গরম হয়ে যাবে অল্প ব্যাবহার করার কারণেই।

আরও পড়ুন:

আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং কি ?

১০. ফোন নিজে থেকে গরম হয়ে যাবে। স্মার্টফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় গরম হয়ে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অল্প সময়েই গরম হয়ে। তখন থেকেই এটা দেখে অবাক হয়ে যান আর ভাবতে থাকেন ব্যাবহার তো অল্প করলেন কিন্তু গরম কেনো হলো। তখন আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনার মোবাইল ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হয়েছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে অল্প ব্যাবহার কারণে না বরং মোবাইল এমনে রেখে দিলেও অনেক গরম হয়ে যায়।

ক্ষতিকর সফটওয়্যার গুলো কি

বন্ধুরা ক্ষতিকর সফটওয়্যার (Malicious Software) হলো এমন সফটওয়্যার যা কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক অথবা ডিভাইসের নানা ক্ষতি করে, তথ্য চুরি করে, অথবা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তাদের ডিভাইস ওপর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দেয়া হলো:

১. ভাইরাস (Virus): ভাইরাস একটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পরা সফটওয়্যার যা কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনে প্রবেশ করে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা প্রোগ্রামকে সংক্রমিত করে। আর সেগুলোর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।

আরও পড়ুন:

সাইবার অপরাধ ও মানুষের জীবনে তার প্রভাব

২. ওয়ার্ম (Worm): ওয়ার্মও কিন্তু একটি ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পরতে পারে। তবে এটি প্রায়শই নানা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়ায় এবং কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের সিস্টেমের পারফরম্যান্সকে উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক কমিয়ে দেয়।

৩. ট্রোজান হর্স (Trojan Horse): ট্রোজান হর্স হলো এমন একটি সফটওয়্যার যা নিজেকে বৈধ প্রোগ্রামের মতো করে উপস্থাপন করে থাকে। কিন্তু এটি একবার ইনস্টল হলে এটি কম্পিউটারে কিংবা স্মার্টফোনে ক্ষতিকর কার্যকলাপ শুরু করে দেয়।

৪. স্পাইওয়্যার (Spyware): স্পাইওয়্যার এমন একটি অ্যাপ যা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তাদের কম্পিউটারের কিংবা স্মার্টফোনে বিভিন্ন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে। আর সেইসব তথ্য চুরি করে হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

৫. র‌্যানসমওয়্যার (Ransomware): র‌্যানসমওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটারের কিংবা স্মার্টফোনে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এনক্রিপ্ট বা লক করে দেয়। আর সেই ডেটা পুনরুদ্ধারের জন্য মুক্তিপণ ( টাকা ) দাবি করে।

৬. অ্যাডওয়্যার (Adware): অ্যাডওয়্যার হচ্ছে এড দেখানোর একটি এপ্লিকেশন। আর এটি ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে, স্মার্টফোনে ইন্সটল হয়ে যায় আর অবাঞ্ছিত নানা বিজ্ঞাপন শো করে। আর এটি প্রায়শই বিরক্তিকর হতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে স্পাইওয়্যারের সাথে মিলে একত্রে কাজ করে থেকে।

৭. রুটকিট (Rootkit): রুটকিট হচ্ছে একটি সফটওয়্যার যা হ্যাকারদের কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের সিস্টেমে গভীর জায়গা করে দেয় এবং তাদের হ্যাকিং কার্যক্রমকে লুকানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

বন্ধুরা এইসব সফটওয়্যারগুলো সাধারণত কম্পিউটারের নানা কার্যক্রমকে ধীর করে দেয়। আর সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে অথবা সিস্টেমকে পুরোপুরি অকার্যকর করে। আর এগুলো থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে সবসময় আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। আর অনির্ভরযোগ্য সোর্স বা ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যাবে না, আর এর থেকে এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

আপনি কি মনে করেন আপনার স্মার্টফোন ম্যালওয়্যারের হাত থেকে নিরাপদ? এই আর্টিকেলে উল্লেখিত লক্ষণগুলো একবার যাচাই করে দেখুন। এই আর্টিকেল আমরা আলোচনা করেছি যে, আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের সম্ভাবনা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। আর আজকের ডিজিটাল যুগে সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। আর তাই স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ হওয়ার প্রাথমিক সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং যথাযথ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে স্মার্টফোন স্ক্যান করা উচিত। আর পাশাপাশি অনির্ভরযোগ্য অ্যাপস ডাউনলোড থেকে বিরত থাকা, সফটওয়্যার সবসময় আপডেট রাখা, এবং ডেটা ব্যাকআপ রাখার মতো সাবধানতামূলক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আপনি সচেতন থাকলে আপনি সহজেই ম্যালওয়্যার সংক্রমণ থেকে আপনার স্মার্টফোন এবং ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারবেন।

আর যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url