আপনি কি সাইবার অপরাধের শিকার ? হতাশ হবেন না, জেনে নিন করণীয় !

আচ্ছা আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ? অথবা আপনি কি চিন্তা করছেন যে যদি আপনি ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে যান, তাহলে তখন কী করবেন ? অথবা আপনি কী জানতে চান যে  আপনি ভবিষ্যতে এই সাইবার অপরাধের শিকার হলে তখন কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন ? তাহলে বন্ধুরা  আজকের আমার এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাবো যে, সাইবার অপরাধ কী ? এবং কীভাবেবুঝবেন যে আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন কী না ? আর এই সাইবার অপরাধের শিকার হলে আপনার তখন করণীয় কী ? আর আপনি কীভাবে সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন ? সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো এখন।

আপনি কি সাইবার অপরাধের শিকার ? হতাশ হবেন না, জেনে নিন করণীয় !

তো আজকে আমার এই আর্টিকেল শুরু করার আগেই আমি আপনাদের বলে দিতে চাই যে আজকের এই পুরো আর্টিকেল আমি যেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো সেই গুলো আমি অনলাইনে বিভিন্ন জায়গায় অনেক রিসার্চ করার পর এগুলো জেনেছি। তো অনলাইনে এইসব রিসার্চ করার সময় আমি কিছু কিছু সাইবার আইনের লোকেদের দেয়া সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে পরামর্শ আর সম্পর্কিত কিছু ভিডিও এবং এর পাশাপাশি যারা যারা  এই সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে তারা কীভাবে এই সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। তো সে সম্পর্কে তাদের বলা তথ্য এবং বক্তব্য গুলো আমি শুনেছি আর এ পাশাপাশি অনেক জায়গায় অনেক আর্টিকেল পড়েছি এই সাইবার অপরাধ এর বিষয়ে এবং তারপরেই আমি আজকে আপনার সাথে এই সাইবার অপরাধ বিষয়ে আর্টিকেল শেয়ার করতে এসেছি।


তো বন্ধুরা চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে এবার চলে যাওয়া যাক মূল আর্টিকেল এবং জেনে নিন যে সাইবার অপরাধ কী ? কীভাবে বুঝবেন যে আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন কী না? এবং সাইবার অপরাধের শিকার হলে আপনি নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবেন সেই সব সম্পর্কে।


সাইবার অপরাধ এটা কী ?


তো সাইবার অপরাধ হলো এমন ধরনের অপরাধ যে অপরাধগুলো আজকাল ইন্টারনেট,  কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অথবা কোন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে এগুলা করা হয়। ‌আর এই সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারও কিন্তু হতে পারে। তো বেশ কয়েকটি সাইবার অপরাধের উদাহরণ দেয়া হল: বিভিন্ন একাউন্ট হ্যাকিং, অনলাইনে কাউকে হুমকি দেওয়া, অনলাইনে স্ক্যাম করা, শিশুদের বাজে ভিডিও আপলোড করা অথবা সার্চ করা ইত্যাদি।


আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন কী না কীভাবে বুঝবেন ?


আচ্ছা আপনার কি অনলাইনে যেকোন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে ? আচ্ছা আপনি কি অনলাইনে কোনো রকম যে কোনো হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ? অথবা আপনার কি অনলাইনে যে কোনো রকম মানহানি শিকার হয়েছেন ? আপনার কি অনলাইনে আপনার ব্যক্তিগত কোন তথ্য চুরি হয়েছে ? কিন্তু এই প্রশ্ন গুলোর মধ্যে থেকে আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিত সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। আমি যেমনটি আগেই বলেছিলাম যে সাইবার অপরাধ হলো ইন্টারনেট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার সংযোগ অথ যে কোন ডিজিটাল ডিভাইস, এগুলো ব্যবহার করে এই সংঘটিত অপরাধ গুলো হয়। আর আপনি যদি এরকম কোন সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত হয়ে থাকুন যে আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। তো বন্ধুরা চলুন এবার আমরা জানবো যে, আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে যান, তাহলে কী করবেন তখন ?


সাইবার অপরাধের শিকার হলে তখন কী করণীয় ?


এই সাইবার অপরাধ হচ্ছে একটি মারাত্মক পর্যায়ের অপরাধ আর এইসব সাইবার অপরাধের শিকার কেউ হলে আমাদের বেশ অনেক কিছুই করণীয় থাকে। তো তাই আপনার বোঝার সুবিধার্থে চলুন আমরা সেগুলোকে পার্ট বাই পার্ট এবং ধীরে ধীরে বোঝা যাক। আর নিচের আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার এ থেকে বাঁচতে যা যা করণীয় সেগুলো নিচে দেয়া হলো:


১. সাইবার অপরাধ শিকার হলে শান্ত থাকুন এবং প্রমাণ সংগ্রহ করুন


যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন তাহলে, সর্বপ্রথম নিজেকে শান্ত রাখুন। আমি জানি যে এটি করা সে অবস্থায় বেশ অনেকটা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু, এমন অবস্থায় যদি আপনি নিজেকে শান্ত রাখতে না পারেন,  তাহলে কিন্তু আপনার বিরাট ভুল করে বসার সম্ভাবনাও থেকে যায়। আর আপনি সেই সময় শান্ত না থাকলে আপনি অস্থির মেজাজে সঠিক সিদ্ধান্ত গুলোও নিতে পারবেন না। তো তাই আপনি সাইবার অপরাধের যেকোনো শিকার হলে আপনি সর্বপ্রথম শান্ত থাকুন। এমন অবস্থায় নিজেকে শান্ত রাখতে না পারলে তখন আপনার বড় কোন সচেতন এবং শিক্ষিত কোনো লোক অথবা অভিভাবককে এই সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার বিষয়ে জানান। এবং তার কাছ থেকে সাপোর্ট চান। এবং আপনার সাথে যে সাইবার অপরাধটি ঘটেছে সেটির যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখুন।


আর আপনাকে যদি কেউ অনলাইনে কোন রকম কেউ হুমকি দিয়ে থাকে অথবা আপনার কোন মানহানি করে যেমন:- আপনার নিজের ছবিকে খারাপ ভাবে এডিট করে আপনাকে ভয় দেখানো। অথবা আপনার ব্যক্তিগত গোপন কোন জিনিস তার কাছে আছে, এবং  সে সেটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমন কোনো কিছু হয়ে থাকে আপনার সাথে বা আপনার যদি কোন সোশ্যাল মিডিয়া অথবা যেকোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকে, অথবা যেকোনো সাইবার অপরাধ ঘটে থাকে, তাহলে তখন সবার আগে সেটির প্রমাণ সংগ্রহ করুন। আর প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য সেই ঘটনাটির স্ক্রিনশর্ট অথবা স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখুন। বা আপনার যদি কোন সোশ্যাল মিডিয়া অথবা অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকে, তাহলে সেটির নোটিফিকেশন অথবা ই-মেইল বা এসএমএস গুলো সংগ্রহ করে রাখুন। তবে সবচেয়ে ভালো হবে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটি আপনি আপনার মোবাইলের স্ক্রিন রেকর্ডিং করে সেভ রাখা।


২. দ্রুত কর্তি পক্ষের কাছে সাইবার অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করুন


আপনি প্রমাণ গুলো সংগ্রহ করার পর সেই প্রমাণ নিয়ে শীঘ্রই কীর্তি পক্ষের কাছে সেই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করুন। অভিযোগ যখন দায় করবেন তখন অবশ্যই সে সময় সেই অভিযোগের প্রমাণ এবং, কখন ঘটনাটি ঘটেছিল, আর কীভাবে আপনি টের পেয়েছেন   সেই ঘটনাটি মনে এক কথায় পুরো আপনি পুরো ঘটনাটি উল্লেখ করুন সেই অভিযোগ দায়ের করার সময়। আপনি জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৯৯ অথবা আপনার নিকটস্থ থানায় সাইবার অপরাধের অভিযোগটি করতে পারেন। কিন্তু যদি এমন হয় আপনি কোন জটিল পরিস্থিতিতে পড়ে গেলেন বা যান এবং বুঝতে না পারেন যে কোথায় কিভাবে কী করতে হবে সেক্ষেত্রে আপনি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ কোন উকিলের পরামর্শ নিন আর সে অনুযায়ী কাজ করুন।


৩. আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দিন আপনার


যদি আপনার কোন আর্থিক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় তাহলে সাথে সাথে আপনার ওই অ্যাকাউন্টের অফিসে কল করুন এবং আপনার সকল ধরনের লেনদেন বন্ধ করে দিন অ্যাকাউন্টের । আর্থিক অ্যাকাউন্ট মানে: মোবাইল ব্যাংকিং যেমন: রকেট, নগদ, বিকাশ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা যেকোন অনলাইন আর্থিক অ্যাকাউন্ট যেখানে আপনার টাকা রয়েছে ইত্যাদি অ্যাকাউন্ট কে বুঝাননো হয়ে থাকে। তো এখন আপনার কোন আর্থিক অ্যাকাউন্ট যদি হ্যাক হয় তাহলে সর্ব প্রথম সেই অ্যাকাউন্টের অফিসিয়াল সাপোর্ট অথবা অফিসে যোগাযোগ করে আপনার সেই অ্যাকাউন্টের আর্থিক সকল প্রকার লেনদেন বন্ধ করে দিন। এর ফলে হ্যাকার আপনার অ্যাকাউন্ট পেয়ে গেলেও আপনার টাকা সে চুরি করে নিতে পারবে না।


৪. পরিবর্তন করুন আপনার পাসওয়ার্ড 


 যদি আপনার কোন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে থেকে বা হ্যাকিং জনিত সাইবার অপরাধের ভুক্তভুগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সর্ব প্রথম পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে সেই অ্যাকাউন্টের। আর যদি সেই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টটি ফরগেট করার চেষ্টা করুন। যদি ফরগেট করার চেষ্টাও বিফলে যায় তাহলে সেই অ্যাকাউন্টটি রিকভার করার প্রচেষ্টা করুন। একজন অভিজ্ঞ হ্যাকার যদি আপনার কোন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট অথবা যে কোন একাউন্ট হ্যাক করে থাকে, তো সে এমন ভাবে আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে হ্যাক করে থাকে তখন আর এইসব অপশনগুলো তারা আপনার অ্যাকাউন্ট আপনার কাছে ফেরত আনার কোন অপশনই থাকে না। এরপরেও যদি আপনার কোন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে থেকে এবং সেটি থেকে ফেরত আনার জন্য সর্বপ্রথম এই চেষ্টাগুলো করা উচিত আপনার তাই আপনি সর্বপ্রথম নিজে থেকে এ চেষ্টাগুলো করুন হ্যাকিং জনিত কোন সাইবার অপরাধের শিকার হলে।


৫. বিশ্বস্ত করো কাছ থেকে সাপোর্ট নিন, আর ভয় পাবেন না 


আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন তাহলে ভয় পাবেন না। যেকোনো মানুষ অনেক ভয় পেয়ে যায় সাইবার অপরাধের শিকার হলে কারণ, সেখানে তার নিজের অনেক পার্সোনাল তথ্য এবং অনেক কিছু লস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর সাইবার অপরাধকারীরা এই সুযোগটাই নিয়ে থাকেন। আপনাকে তারা বারবার ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে থাকবে তাই আপনি ভয় পাবেন না সাইবার অপরাধের শিকার হলে। আপনার মনের ভয় থেকে এড়াতে আপনার পরিচিত আপন সচেতন এবং বিশ্বস্তদের থেকে সাপোর্ট নিন। আর সেই বিশ্বস্তদের সাথে সাইবার হামলার পুরো ঘটনাটি শেয়ার করুন এবং তাদের কাছ থেকে সমর্থন চান।


উপসংহার


সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া একটি গুরুতর সমস্যা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে এই ধরনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারি। সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করা এবং সন্দেহজনক লিঙ্ক বা ইমেইল এড়িয়ে চলা আমাদের সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হতে পারে। সর্বোপরি, সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি।


Next Post
No Comment
Add Comment
comment url